বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্তানকে সান্ত্বনা দিতে পাতিলে পাথর রেখে মায়ের রান্নার অভিনয়   

অনলাইন ডেস্কঃ মহামারি রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে, মানুষের জীবন বাঁচাতে লকডাউন ঘোষণা করেছে অনেক দেশের সরকার। আর এই বিধিনিষেধের কারণে জীবিকা নির্বাহের উপায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক মানুষের। বিশ্ব অর্থনীতির ধ্বসের সঙ্গে সঙ্গে প্রতীয়মান হচ্ছে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের। এই দুর্ভিক্ষের চিত্রই যেন ফুটে উঠেছে কেনিয়ার উপকূলীয় মোম্বাসা শহরের একটি পরিবারে। ঘরে নেই কোনো খাবার। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে একমাত্র উপার্জনের পথটিও বন্ধ। তাই ক্ষুধার্ত সন্তানদের সান্ত্বনা দিতে উপায় না পেয়ে পাতিলে পাথর রেখে রান্নার অভিনয় করেছেন এক মা। এই আশায়, বাচ্চারা খাবারের অপেক্ষা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়বে!এমনই এক মর্মস্পর্শী ঘটনা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। পেনিনা বাহাতি কিতসাও নামের ওই বিধবা মায়ের দুর্দশার চিত্র মানুষের সামনে আসে তার প্রতিবেশী প্রিসকা মোমানির মাধ্যমে। ক্ষুধায় কোনোভাবেই থামছিল না বাচ্চাদের কান্না। উপায় না পেয়ে পাতিলে পাথর রেখে চুলোয় আগুন ধরিয়ে বাচ্চাদের ধোঁকা দেওয়ার পথ বেছে নেন মা কিতসাও। হৃদয়বিদারক ঘটনাটি চোখে পড়ে প্রতিবেশী প্রিসকা মোমানির। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে অবগত করেন মোমানি। আর এতেই দুর্দশা ঘুচেছে পরিবারটির। জানা গেছে, অক্ষরজ্ঞানহীন কিতসাও স্থানীয় একটি লন্ড্রিতে কাপড় ধোঁয়ার কাজ করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে কাজটি এখন আর নেই। অল্প দিনেই অন্নহীন হয়ে পড়েন আট সন্তানের এই জননী। কেনিয়ার এনটিভিতে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ওই মাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকেই। প্রতিবেশী মোমানির মাধ্যমে মোবাইল ফোন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকাও পাঠিয়েছেন অনেকে। সহায় সম্বলহীন কিতসাও মানুষের এই উদারতায় মুগ্ধ। স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টাল টোকো নিউজকে কিতসাও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতাম না যে, কেনিয়ানদের এত দয়া আছে। সারা দেশ থেকে আমি ফোন পেয়েছি, কিভাবে তারা সাহায্য করতে পারে জানতে চাচ্ছে।’সন্তানদের খুব বেশি দিন ‘পাথর রান্নার’ ধোঁকা দেখতে হয়নি বলেও জানান কিতসাও। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বলতে শুরু করেছিল, খাবার রান্না নিয়ে আমি তাদের মিথ্যা বলছি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। কারণ আমার কিছুই ছিল না।’গত বছর এক দল সন্ত্রাসীর হামলায় কিতসাওর স্বামী নিহত হলে আট সন্তানকে নিয়ে চরম দুর্দশায় পড়ে যান এই বিধবা।তার প্রতিবেশী প্রিসকা মোমানি জানান, বাচ্চাদের কান্নার শব্দ শুনে সেখানে কী হয়েছে তা দেখার জন্য বের হন। এরপর এই মর্মস্পর্শী দৃশ্যটি দেখতে পান। কিতসাওকে সাহায্যে এগিয়ে আসায় দেশটির কর্তৃপক্ষ ও কেনিয়া রেড ক্রসকে ধন্যবাদ জানান তিনি।করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কেনিয়ার অল্প আয়ের মানুষদের দুর্দশার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে কিতসাওয়ের এই দৃশ্য। করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দেশটির অনেক মানুষ।পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ কাছাকাছি। মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। যদিও এসব দেশে কত সংখ্যক করোনা টেস্ট হয় সে নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক।

এই বিভাগের আরো খবর